মে ২৯, ২০২০
আশাশুনির ৪টি পয়েন্টে কাজ করবে সেনাবাহিনী
সমীর রায়, আশাশুনি : প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আম্পান’র তান্ডবে আশাশুনির ভেঙে যাওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৪ কি.মি. বেড়িবাঁধের ৪টি পয়েন্টে কাজ করবে সেনাবাহিনী। এরমধ্যে আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট ও শ্রীউলার হাজরাখালির বাঁধের কাজ অনতিবিলম্বে শুরু করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রশাসন। সেনাবাহিনী বাঁধ বাঁধবে এ খবর শুনে মানুষ আবার আশায় বুক বাঁধছে। গর্বিত সেনাসদস্যের উপর অগাধ আস্থায় বানভাসী মানুষের ভেতরে অন্যরকম এক আনন্দ বিরাজ করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা সুপার সাইক্লোন আম্পানের তাÐবে ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিয়ে এ প্রতিবেদককে জানান- ২০ মে রাতে সুপার সাইক্লোন আম্পানের তাÐবে পাউবো’র তথ্যমতে আশাশুনি উপজেলার প্রায় ২৪ কি.মি. নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রলয়ঙ্করী ঝড় ও জলোচ্ছ¡াসে প্রতাপনগর ইউনিয়নে চাকলা, কোলা, হিজলিয়া, নাকনা, কুড়িকাহনিয়া, রুইয়ারবিল, সুভদ্রাকাটিসহ বিভিন্ন গ্রামের কপোতাক্ষ নদের বাঁধ ভেঙে পুরো ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে, শ্রীউলার হাজরাখালি বাঁধ ভেঙে ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট ও জেলেখালি গ্রামে খোলপেটুয়ার নদীর বাঁধ ভেঙে দয়ারঘাট, জেলেখালি, আশাশুনি দক্ষিনপাড়া ও মানিকখালী প্লাবিত হয়। এছাড়া আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট ও খাজরা ইউনিয়নেও খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। প্রচÐ ঝড়ে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের দিন আমারা উপজেলার ১০৯ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে আনতে সক্ষম হয়েছি। সেখানে তাদের জন্য শুকনা খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ঝড়ে ৬৮০০ কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পুর্ন বিধ্বস্ত ও ১০৪০০ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১০৫০ আধাপাঁকা ঘরবাড়ি সম্পুর্ন ও ৫২০০ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৪ কি.মি. বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন ও ৩০ কি.মি. কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েগেছে। এর ফলে উপজেলার অর্থনৈতিক মুল ভিত্তি ৮৬৯৮টি চিংড়িঘের প্লাবিত হয়ে কোটী কোটী টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে চিংড়িচাষীদের। কৃষি সেক্টরেও ৬০৪ হেক্টর জমির কৃষিফসল নষ্ট হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ উপড়ে গেছে। উপজেলার ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুটি কলেজ ও ২০টি মাদ্রাসা আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া উপজেলার ৪৫.৭৫ কি.মি. বিদ্যুৎ লাইনের আশিক ক্ষতি হয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। ঝড়ে কোন মানুষের প্রাণহানি বা আহত হওয়ার ঘটনা না ঘটলেও ২ শতাধিক গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড় বা বন্যায় ১৫,৮০০ নারী, ২৫,২০০ পুরুষ, ৩১০০ শিশু ও ৮৩৫ জন প্রতিবন্ধী স্থানচ্যুত হয়েছে। আম্পান পরবর্তী ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার বরাদ্দের ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে বাকী টাকা চেক এখনও পাওয়া যায়নি। এছাড়া ১০৫ মে.ট. চাউলের মধ্যে ঝড়ের পরদিন সব কয়টি ইউনিয়নে ৩০ মে.ট. বন্টন করা হয়। পরবর্তীতে ক্ষতির পরিমাণ দেখে আশাশুনি ১০, প্রতাপনগরে ২৪, শ্রীউলায় ১৪, আনুলিয়ায় ৫ ও খাজরায় ১ মে.ট. চাউল বণ্টন করা হয়েছে। ২৪ কি.মি. ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সম্পর্কে তিনি বলেন- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট, শ্রীউলার হাজরাখালি, প্রতাপনগরের কোলা, হিজলিয়া ও চাকলা পয়েন্টে বাঁধ সংস্কার করবেন বলে জানাগেছে। তাদের কর্মকর্তাবৃন্দ ইতোমধ্যে এসব এলাকার মাপজরিপ শুরু করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ক্যাপ্টেন সামশ্ এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- আমাদের সদস্যরা আশাশুনি পৌঁছে গেছে। শনিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁধের কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। 8,472,370 total views, 10 views today |
|
|
|